বরিশালে সবুজ পৃথিবী গড়ার আহ্বানে নৌ শোভাযাত্রা

বরিশালে সবুজ পৃথিবী গড়ার আহ্বানে নৌ শোভাযাত্রা

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট অভিঘাত মোকাবিলায় ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ ও নবায়নযোগ্য বিনিয়োগের দাবিতে বরিশালে নৌকা শোভাযাত্রা করেছেন মান্তা জনগোষ্ঠীর লোকজন। ন্যায্য রূপান্তরের মাধ্যমে একটি সবুজ পৃথিবী ও টেকসই ভবিষ্যতের আহ্বানে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস’ এ কর্মসূচির আয়োজন করে।

আয়োজকেরা জানান, নবায়নযোগ্য জ্বালানি সপ্তাহের অংশ হিসেবে (২৬ মে-১ জুন) ‘চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ–এর সহযোগিতায় ১২টি প্রতিষ্ঠান ও তরুণ সংগঠন সারা দেশে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার দুপুরে বরিশাল সদর উপজেলার টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের বুখাইনগর নদে এ নৌ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। বিঘাই, কালাবদর নদ ঘুরে লাহারহাট এলাকায় এসে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়।

এ সময় অংশগ্রহণকারীদের হাতে ও নৌকাগুলোর ছাউনিতে বিভিন্ন স্লোগান লেখা ব্যানার ও ফেস্টুন শোভা পায়। ব্যতিক্রমী এই আয়োজন দেখতে নদের পাড়ে উৎসুক মানুষ ভিড় করে। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন মান্তা সম্প্রদায়ের সরদার মো. জসিম। এতে ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের প্রোগ্রাম ও পার্টনারশিপ সমন্বয়ক মো. আরিফুর রহমান, ইয়ুথনেটের জেলা সমন্বয়কারী আশিকুর রহমান, ইয়ুথনেটের বিভাগীয় সমন্বয়কারী মো. আশিকুর রহমান, ময়ূরী আক্তারসহ জলবায়ুকর্মীরা অংশ নেন।

মান্তা সম্প্রদায়ের সদস্যরা সারা বছর পরিবার নিয়ে নৌকায় বসবাস করেন। রান্নাবান্না, খাওয়া, ঘুমানো সবই চলে সেখানে। তাঁরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। বর্তমানে মান্তাদের প্রায় ৫০টি পরিবার লাহারহাট এলাকায় বসবাস করছে। তাঁদের সরদার মো. জসিম বলেন, ‘আমরা ঝড়, বন্যা মোকাবিলা করে নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাই। নদীতে আগের মতো মাছ পাই না। আর দিন দিন যে হারে ঝড়-বন্যা বাড়ছে, তাতে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। রাতের আঁধারে বাচ্চাদের জন্য চিন্তায় থাকি, নদীতে পড়ে কখন কী হয়ে যায়। আমরা বিদ্যুৎ–সুবিধা পাই না। বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে কোনো ব্যবস্থা থাকলে আবহাওয়া ও ঘূর্ণিঝড়ের খবরাখবর নিয়ে নদীতে চলাচল করতে পারতাম। এ ছাড়া আমাদের কিছু পরিবার সোলার প্যানেল ব্যবহার করে। আমরা জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার না করেও এর ভুক্তভোগী।’

শোভাযাত্রা চলাকালে ইয়ুথনেটের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি আরিফুর রহমান বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে প্রতিনিয়ত পৃথিবী উষ্ণ হচ্ছে। ফলে ঋতুর অস্বাভাবিক পরিবর্তনসহ ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। এতে মান্তা সম্প্রদায়ের মতো সমাজে যাঁরা পিছিয়ে রয়েছেন, তাঁরা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই সবার উচিত নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার উৎসাহিত করা।

তরুণ জলবায়ু কর্মীরা বলেন, বিশ্বকে বাসযোগ্য করতে ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আরও সোচ্চার হতে এ আন্দোলনে শামিল হয়েছেন তাঁরা। তরুণ জলবায়ু কর্মী আশিকুর রহমান বলেন, ‘সৌরশক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি। এতে আমাদের পরিবেশ ও প্রকৃতিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং সৌরশক্তি ব্যবহারের ফলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও আসবে।’

ইয়ুথনেটের জেলা সমন্বয়কারী আশিকুর রহমান বলেন, উন্নত বিশ্ব অতিরিক্ত পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে দিন দিন উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। যা থেকে পরিত্রাণ পেতে আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারের বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে দরকার বাংলাদেশসহ সব দেশের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও সব শ্রেণির মানুষের উদ্যোগ।