গত দু’বছর ধরে একটা বিষয় প্রায়ই দেখা যাচ্ছে মেজর লিগ সকারের খবরে চোখ রাখলে। দর্শক সংখ্যার রেকর্ড ভাঙছে বারবার। ইন্তার মায়ামিতে লিওনেল মেসি যাওয়ার পরেই যা মূলত হচ্ছে।
কিন্তু ঘটনা হলো, বেসবল–ন্যাশনাল ফুটবল লিগ–বাস্কেটবলের দেশে সকার ভক্তকুল বাড়ছে অনেক দিন থেকেই। টিফো–স্মোক বম্ব নিয়ে ফ্যানেদের মাঠে আসতে দেখা যায়। এক কথায়, পরিণত হচ্ছে ইউএসএ–র ফুটবল লিগ।
অথচ, বছর দশেক আগে গোটা বিশ্বের মিডিয়ার একাংশ রায় দিয়েছিল, চাইনিজ় সুপার লিগ বা সিএসএলের কাছে কেন হেরে যাচ্ছে এমএলএস। তার কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, তারকাদের রিটায়ারমেন্ট পোস্টিংয়ের জায়গা এমএলএস।
২০১১–১২ থেকে চিনের সুপার লিগ যে ভাবে ফুলে–ফেঁপে উঠতে শুরু করেছিল, তাতে প্রশ্নটা সেই সময়ে স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এক দশক পেরোতে না পেরোতে, ‘... দু’জনার দুটি পথ ওগো দুটি দিকে গেছে বেঁকে।’ চিনের ফিফা র্যাঙ্কিংও নেমে গিয়েছে ৯৪–তে।
এই মুহূর্তে ভারতে স্বপ্নের ইন্ডিয়ান সুপার লিগ যে ভাবে গোঁত খেয়ে পড়ছে, তাতে এমএলএসের সঙ্গে সিএসএলের এই তুলনা প্রাসঙ্গিক। তিনটি লিগের মধ্যে মিল ছিল কয়েকটা— বেশি অর্থ খরচ করে নামী বিদেশি ফুটবলার নিয়ে আসা যার অন্যতম।
ডেভিড বেকহ্যাম এমএলএসে খেলতে গিয়েছিলেন ২০০৭ সালে। পরে থিয়েরি অঁরি, জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচরা গিয়েছেন। তবে তা ছিল কেরিয়ারের শেষ প্রান্তে।
চিনা সুপার লিগ বা সিএসএলে তুলনায় কম বয়সি ফুটবলাররা গিয়েছেন গত দশকে। ২০১৬ নাগাদ হঠাৎ বিরাট খরচ করতে শুরু করে চিনা সুপার লিগের টিমগুলি। অস্কার, হাল্ক, পাউলিনিয়ো, মারুয়েন ফেলাইনি, ইয়ানিক কারাস্কো, রামিরেস, মার্কো আর্নাউতোভিচরা যেতে শুরু করেন চিনে। সেই সময়ে এই তারকারা কেরিয়ারের মধ্য গগনে। তাদের পে প্যাকেজও ছিল ঈর্ষনীয়।
কিন্তু তার পরে চিনের লিগ ধসে গেল কেন? কার্লোস তেবেসও গিয়েছিলেন চিনে, তবে তুলনায় বেশি বয়সে। সিএসএল থেকে ফিরে বলেছিলেন, ‘সাত মাস যেন ছুটি কাটিয়ে এলাম।’
অর্থাৎ, ইউরোপের তুলনায় যে খেলার চাপ কম, সেটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন। ২০১৮ সালের পর থেকে লিগে নিয়ম হয়, বেতনের ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণের। প্রথমে দেশি ফুটবলারদের, পরে বিদেশিদেরও। ফলে বিদেশিদের যাওয়ার গরজ কমে যায়। তা ছাড়া সবচেয়ে বড় ফারাক এমএলএস এবং চিনের লিগের ছিল, তা হলো দেশি ফুটবলারদের দক্ষতার অভাব।
এমএলএসের প্রতিটা ক্লাবের ইয়ুথ সিস্টেম তুলনায় ভালো। গত পাঁচ–ছ’বছরে যা আরও উন্নত। সিএসএলের টিমগুলো তাদের ইয়ুথ সিস্টেম সে ভাবে গড়ে তোলেনি। ভালো দেশি ফুটবলার না থাকায় চিনে লিগের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে হু–হু করে।
মাঠে দর্শক কমতে থাকে। কোভিড আসার পরে যা আরও খারাপ রূপ নিয়েছে। সিএসএল চলছে, কিন্তু জৌলুস কমেছে। ১৯৯৮ সালে চিনের ফিফা র্যাঙ্কিং ছিল ৩৭, এখন তা ৯৪। আর ইউএসএ ২০১২ সালে ৩৬ থেকে বর্তমানে ১৬। এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে ইয়ুথ সিস্টেম উন্নত করেই।
আইএসএলও ভুগেছে একই রোগে। হাতেগোনা কয়েকটা ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি ছাড়া তাগড়া ইয়ুথ সিস্টেম তৈরি হয়নি। দেশি ফুটবলারও উন্নত মানের ওঠেনি। লিগের জনপ্রিয়তা এবং ব্র্যান্ড ভ্যালু তাই বাড়েনি। প্ৃষ্ঠপোষকরাও তাই পিঠ ঘুরিয়ে দাঁড়ানোর সাহস দেখাচ্ছেন।