নির্বাচন না করে সমঝোতায় গঠিত হওয়া মোহনবাগানের কর্মসমিতির মধ্যে সত্যিই কি বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে? তা বোঝা যাবে কাল শুক্রবার। এ দিন বিকেলে ক্লাব তাঁবুতে কর্মসমিতির দ্বিতীয় সভার মূল অ্যাজেন্ডা মোহনবাগান ডে পালন নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। আর সেই অ্যাজেন্ডায় বেছে নেওয়া হবে ২৯ জুলাই মোহনবাগান রত্ন প্রাপক।
এই রত্ন বাছাইয়েই বোঝাপড়া নয়, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে ওঠার সম্ভাবনা। সচিব সৃঞ্জয় বসুর গোষ্ঠী চাইবে তাদের মনোনীত কাউকে এই রত্ন দেওয়ার। অন্য দিকে, প্রেসিডেন্ট দেবাশিস দত্তের অনুগামীদের লক্ষ্য হবে, তাঁদের পছন্দের ব্যক্তিকে রত্ন-সম্মান দেওয়া।
আসলে দুই গোষ্ঠীই আড়াই মাস ধরে নির্বাচনী প্রচারে বেশ কয়েকজনকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রত্ন পাইয়ে দেওয়ার। দেবাশিসের থেকে সৃঞ্জয়ের গোষ্ঠীতেই এই প্রতিশ্রুতি বেশি ছিল।
সৃঞ্জয়ের হয়ে প্রচারে নেমেছিলেন কম্পটন দত্ত, শিশির ঘোষ, অমিত ভদ্র, শিল্টন পালরা। এঁদের মধ্যে শিল্টন ছাড়া কমিটিতে কেউ ঢুকতে পারেননি। কম্পটন, শিশির, অমিতরা তাই রত্ন-প্রাপ্তির আশায়। এবং তাঁরা তার জন্য যোগ্যও।
এই যোগ্যতার লড়াইয়ে আবার এগিয়ে বিদেশ বসু ও মানস ভট্টাচার্য জুটি। এক যুগের বেশি সময় ধরে দাপিয়ে ফুটবল খেলে এই জুটি সবুজ মেরুনে অসংখ্য ট্রফি এনে দিয়েছিলেন। মানস তো ক্লাবের সর্বকালের অন্যতম সেরা স্কোরারদের মধ্যে একজন।
বিদেশ-মানসের সময় মোহনবাগানের হয়ে যাঁরা সাফল্য পেয়েছিলেন, তাঁদের বেশিরভাগ অর্থাৎ সুব্রত ভট্টাচার্য, প্রদীপ চৌধুরী, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যাম থাপা, গৌতম সরকাররা রত্ন পেয়ে গিয়েছেন।
গত বার যখন ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে মোহনবাগান রত্ন দেওয়া হয়, তখনই অলিখিতভাবে ঠিক হয়েছিল পরের বছর বিদেশ–মানসকে একসঙ্গে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।
আসলে বাংলা তো নয়ই, ভারতীয় ফুটবলে টানা ৫২ বছর বন্ধুত্বের জুটি বিদেশ-মানস ছাড়া আর কারও নেই। এই অসামান্য বন্ধুত্বের কথা মাথায় রেখেই এই জুটিকে রত্ন দেওয়ার পরিকল্পনা করা ছিল। কিন্তু এখন সেই দৌড়ে অন্য সৃঞ্জয় গোষ্ঠীর কম্পটনের নাম।
এই দ্বন্দ্ব আটকাতে দুই গোষ্ঠীর একত্রিত ফর্মুলা হতে পারে, টুটু বসু আর প্রয়াত অঞ্জন মিত্রকে মোহনবাগান রত্ন দেওয়া। এই দুই নামে দুই গোষ্ঠীই কোনও আপত্তি তুলতে পারবে না।
নির্বাচনী সভায় দেবাশিস যেমন অঞ্জন মিত্রের ছবি সামনে রেখে এগিয়েছিলেন, তেমনই বলেছিলেন জিতলে তিনি টুটু বসুকেই প্রেসিডেন্ট করবেন। আর সৃঞ্জয় জিতলে তো টুটু বসুর প্রেসিডেন্ট পদে থাকা নিশ্চিতই ছিল। কারণ তাঁদের প্রচারে টুটু বসুর মুখ ব্যবহার করেই লেখা হয়েছিল, ‘তোমাকে চাই।’
রত্ন সম্মানে কমিটি কাকে বা কাদের চায়, এখন সেটাই দেখার।