দেশের প্রথম রোবট ডিসপ্লে সেন্টারে দেখা মিলছে বিভিন্ন ধরনের রোবটের
বাজার বিশ্লেষকদের হিসাবে, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী গৃহস্থালি রোবটের বাজারের আকার ছিল প্রায় ১ হাজার ১৯৭ কোটি মার্কিন ডলার। বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে ২০২৫ সালে এই বাজারের আকার ১ হাজার ৪৪৫ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও গৃহস্থালি রোবটের চাহিদা ভবিষ্যতে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টিকে মাথায় রেখে দেশে প্রথমবারের মতো বিশেষ রোবট ডিসপ্লে সেন্টার চালু করেছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় ও ড্যাফোডিল কম্পিউটারস পিএলসি। রাজধানীর সোবহানবাগে ড্যাফোডিল প্লাজায় চালু করা সেন্টারটিতে গেলেই বিভিন্ন রোবটের দেখা মিলবে।
রোবটের ধরন
প্রযুক্তি এখন দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। সেই ছাপ রোবট–দুনিয়াতে দেখা যাচ্ছে। পশ্চিমা অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের শিল্পকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সাধারণ আবাস-বাসাবাড়িতেও ধীরে ধীরে রোবটের উপস্থিতি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের রোবট ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। শিক্ষামূলক রোবোটিকস, গৃহস্থালি বা বাণিজ্যিক কাজের জন্য রোবট, আর শিল্পকারখানার বিভিন্ন কাজের উপযোগী বিভিন্ন রোবট। এ বিষয়ে ড্যাফোডিল কম্পিউটারস পিএলসির মহাব্যবস্থাপক জাফর আহমেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘দেশে রোবোটিকসের চর্চা এখন আর বিলাসিতা নয়। উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, খরচ কমানো আর মানুষের পরিশ্রম হ্রাসের কার্যকর মাধ্যম হতে পারে রোবটের কার্যকর ব্যবহার। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনে রোবটের উপস্থিতি বাড়াতে আমরা এই ডিসপ্লে সেন্টার তৈরি করেছি। এখানে বিভিন্ন কাজের ধরন অনুসারে বিভিন্ন রোবট রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উন্নত রোবটপ্রযুক্তি আমরা এখানে প্রদর্শন করছি। এসব রোবট বিদেশে তৈরি হলেও এদের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশের প্রকৌশলীরাই কাজ করছেন। আমরা ধীরে ধীরে দেশের রোবট বাজার বিকাশের জন্য সেন্টারটি তৈরি করেছি।’
শিক্ষামূলক রোবট
গত বুধবার ডিসপ্লে সেন্টারে গিয়ে প্রথমেই চোখ পড়ল মানব ও প্রাণীর আকৃতির বিভিন্ন রোবট। ২০ থেকে ২৫ ইঞ্চি লম্বা রোবটগুলো ‘ট্রান্সফরমার’ সিনেমার মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে। এসব রোবট বিভিন্ন বিষয় শেখার কাজে ব্যবহার করা যায় বলে জানালেন ড্যাফোডিল কম্পিউটার পিএলসি ল্যাবের ব্যবসা উন্নয়ন ব্যবস্থাপক মাইদুল ইসলাম। তিনি জানান, এসব রোবটের পাশাপাশি এআই রোবোটিকস কিটও পাওয়া যায় রোবট ডিসপ্লে সেন্টারটিতে। এসব শিক্ষামূলক রোবোটিকস কিট ব্যবহার করে হাতে–কলমে রোবট তৈরি করা যায়। এই কিট ব্যবহার করে প্রোগ্রামিং, এআইয়ের বিভিন্ন ধারণা ও সমস্যা সমাধানে দক্ষতা গঠনে সহায়তা করতে পারে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য রোবট
শহরের ব্যস্ত জীবনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ সহজ করতে রোবট দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। ডিসপ্লে সেন্টারে এয়াররোবো টি২০, পি২০ ও পিসি ১০ মডেলের মতো রোবট রয়েছে। এসব রোবট মূলত স্বয়ংক্রিয় ভ্যাকুয়াম ক্লিনার। রোবটগুলোর দাম মডেলভেদে ২৫ হাজার টাকায় শুরু হয়েছে। রোবটগুলো মেঝে বা কার্পেটের ধুলাবালু পরিষ্কার করে নিজেই চার্জিং ডকে ফিরে যেতে পারে। চাইলে অ্যাপের মাধ্যমে স্মার্টফোন থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় রোবটগুলো। রোবটগুলোর বিষয়ে জাফর আহমেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘ঢাকার বিভিন্ন ফ্ল্যাটে গৃহকর্মীর সংকট রয়েছে। মানুষের কর্মজীবনের ব্যস্ততার কারণে ক্লিনিং রোবট ব্যবহারের সুযোগ আছে। পশ্চিমা বিভিন্ন দেশে বড় শপিং মল, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, এমনকি করপোরেট অফিসে অটোমেটেড ক্লিনিং রোবট ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের বাজার বিকাশের জন্য আমরা এ ধরনের রোবট বাজারজাত করছি।’
খাবার পরিবহনে রোবট
ডিসপ্লে সেন্টারে দেখা গেল, দুটি রোবট এদিক–সেদিকে ঘুরছে। রোবট নিয়ন্ত্রণকারী দলের সদস্যরা জানান, এই রোবট খাবার পরিবহন করতে পারে। রোবট এখন বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশন করছে। ৬ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকার মধ্যে কেনা যাবে রোবটগুলো। ৪০ কেজি ধারণক্ষমতার এ রোবটে ২১ ইঞ্চির এইচডি বিজ্ঞাপন ডিসপ্লে রয়েছে। ক্রেতাদের নির্দিষ্ট স্থানের দিকনির্দেশনা জানানোর পাশাপাশি বিভিন্ন তথ্যও জানাতে পারে রোবটগুলো।
শিল্পকারখানায় রোবট
বর্তমানে বিভিন্ন শিল্পকারখানায় রোবট ব্যবহারের চল বেড়েছে। বাংলাদেশের টেক্সটাইল, ইলেকট্রনিকস, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং বা অটোমোবাইল খাতে এখন ধীরে ধীরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট বসানো হচ্ছে। ডিসপ্লে সেন্টারে থাকা হ্যান্স লেজার মার্কিং রোবটের মাধ্যমে মার্কিং–সংক্রান্ত কাজ করা যাবে সহজেই। ইউভি লেজার ও কার্বন ডাই–অক্সাইড লেজার, ফাইবার লেজার রোবটের মাধ্যমে সহজেই পণ্য বা যন্ত্রাংশে লেজার দিয়ে লোগো, বারকোড, সিরিয়াল নম্বর যুক্ত করা যাবে। এ ধরনের রোবটের দাম পড়বে ১০ লাখ থেকে ১৮ লাখ টাকা পর্যন্ত।
দেশের বাজারে স্বল্প মূল্যে পিক অ্যান্ড প্লেস রোবট নিয়ে এসেছে ড্যাফোডিল। যা বিভিন্ন রকমের ভারী শিল্প থেকে শুরু করে হালকা শিল্পে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা, নির্ভুল ও দ্রুত অপারেশন, মানবিক ভুল হ্রাস করা, ২৪ ঘণ্টা কাজের সক্ষমতা এবং মান নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিপবিল্ডিং, পেইন্টিং, মেশিন পার্টস হ্যান্ডেলিং, লেজার ওয়েল্ডিং, স্ট্রাকচার ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রনিকশিল্প, ফুড প্রসেসিং লাইন, অটোমোবাইলশিল্প, ওষুধ উৎপাদন, ই-কমার্স ও লজিস্টিকসের বিভিন্ন কাজে এ রোবট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।