মহররম মাসটি ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময় মাস হিসেবে বিবেচিত। কোরআনে যেমন সম্মানিত চারটি মাসের অন্যতম বলা হয়েছে, তেমনি হাদিসে মাসটিকে আল্লাহর মাস বলে ঘোষণা দিয়ে মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। মহররম মাসে ইসলামে রয়েছে বিশেষ কিছু ইবাদতের নির্দেশনা।
মহররম মাসের ইবাদত সম্পর্কে শরিয়াহ নির্দেশিত বিশেষ পাঁচটি ইবাদতের কথা আলোচনা করা হলো।
এই চার মাসের মধ্যে তোমরা (গুনাহ করে) নিজেদের প্রতি জুলুম কোরো না।সুরা তাওবা, আয়াত: ৩৬
মহররম সম্মানিত চারটি মাসের অন্যতম। কোরআনে এই মাসগুলোতে নিজেদের ওপর জুলুম করতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহর নাফরমানি ও অবাধ্যতার চেয়ে বড় জুলুম আর কী হতে পারে? আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এই চার মাসের মধ্যে তোমরা (গুনাহ করে) নিজেদের প্রতি জুলুম কোরো না।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ৩৬)
নফল রোজা রাখা এ মাসের অন্যতম আমল। নবীজি (সা.) এই মাসের নফল রোজাকে সর্বোত্তম ঘোষণা করেছেন। একটি হাদিসে আছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, রমজানের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহররমের রোজা। (মুসলিম, হাদিস: ২,৬৪৫)
নফল রোজার পাশাপাশি মহররমের বিশেষ আমল হলো তওবা–ইস্তিগফার করা। কেননা, রাসুল (সা.) বলেছেন, মহররম আল্লাহর মাস। এই মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা একটি সম্প্রদায়ের তওবা কবুল করেছেন। (আশা করা যায়) সেদিন অন্যান্য সম্প্রদায়ের তওবাও কবুল করা হবে। (তিরমিজি, হাদিস: ৭৪১)
তাই ক্ষমা পাওয়ার আশায় বেশি বেশি তওবা-ইস্তিগফার করা উচিত।
তবে আশুরার রোজা দুটি। ৯ ও ১০ তারিখ কিংবা ১০ ও ১১ তারিখ। কোনো কোনো আলেম এ বিষয়ে বর্ণিত সব হাদিসের ওপর আমলের সুবিধার্থে ৯, ১০ ও ১১—এ তিন দিন রোজা রাখার কথাও বলেন।
এ মাসের বিশেষ ফজিলতপূর্ণ দিন হচ্ছে দশম দিন, তথা আশুরা। শরিয়তের দৃষ্টিতে আশুরার রোজা রাখা মুস্তাহাব আমল। আবু কাতাদা (রা.) বর্ণনায় রাসুলের একটি হাদিসে আছে, ‘আশুরার এক দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে এই আশা করি যে তিনি এ রোজার অসিলায় বান্দার আগের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন। (মুসলিম, হাদিস: ১,১৬২)
তবে আশুরার রোজা দুটি। ৯ ও ১০ তারিখ কিংবা ১০ ও ১১ তারিখ। কোনো কোনো আলেম এ বিষয়ে বর্ণিত সব হাদিসের ওপর আমলের সুবিধার্থে ৯, ১০ ও ১১—এ তিন দিন রোজা রাখার কথাও বলেন।
মহররমের দশম দিবসে ইহুদিরা রোজা রাখত। যেমন রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আশুরার দিন (মুহররমের দশম দিবস) রোজা রাখো এবং তাতে ইহুদিদের বিরুদ্ধাচরণ করো। আশুরার আগে এক দিন বা পরে এক দিন রোজা রাখো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২,১৫৪)।
এ ছাড়া এ মাসের শুরুর দিনটিকে তারা ঈদের মতো উদ্যাপন করত। রাসুল (সা.) তাদের সঙ্গ উদ্যাপন করতে নিষেধ করেছেন এবং মুসলিমদের দুটি ঈদ—ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, কিয়ামতের দিন সে ওই জাতির দলভুক্ত হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪,০৩১)