হবু স্ত্রীকে আংটি পরিয়ে দেওয়া কি জায়েজ?

হবু স্ত্রীকে আংটি পরিয়ে দেওয়া কি জায়েজ?

পর্দা ইসলামের একটি ফরজ বিধান। নারীদের জন্য যেমন পর্দা জরুরি, পুরুষদের জন্যও পর্দা জরুরি। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করতে এবং চরিত্রের হেফাজত করতে আর নারীদের নির্দেশ দিয়েছেন দৃষ্টি সংযত করার পাশাপাশি নিজেদের শারীরিক সৌন্দর্য ঢেকে রাখতে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, মুমিন পুরুষদের বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদের বল, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সুরা নুর: ৩০, ৩১)

আয়াতে পুরুষের প্রতি যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা থেকে বোঝা যায় পুরুষের জন্য নিজের চরিত্র হেফাজতের পাশাপাশি নিজের দৃষ্টির হেফাজত করা অর্থাৎ অন্যায় দৃষ্টিপাত থেকে বাঁচিয়ে রাখা ফরজ। গায়রে মাহরাম কোনো নারীর শারীরিক সৌন্দর্যের প্রতি ইচ্ছাকৃত দৃষ্টিপাত করা, তাকিয়ে থাকা পুরুষের জন্য হারাম। ভুলক্রমে দৃষ্টি পড়ে গেলে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী সাথে সাথে দৃষ্টি নত করতে হবে। ভুলক্রমে দৃষ্টি পড়ে যাওয়ার পর দৃষ্টি না সরিয়ে দেখতে থাকা বা আবার তাকানো গুনাহের কাজ।

বুরায়দা ইবনে আল-হাসিব (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) আলীকে (রা.) বলেন, হে আলী! দৃষ্টির পর দৃষ্টি ফেলো না। অনিচ্ছাকৃত যে দৃষ্টি পড়ে এর জন্য তুমি ক্ষমা পাবে। কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টির জন্য ক্ষমা পাবে না। (সুনানে আবু দাউদ: ১/২৯২)

তবে কোনো পুরুষ যদি কোনো নারীকে বিয়ের করার ইচ্ছা করে, তাহলে ওই পুরুষের জন্য কনেকে দেখে নেওয়া জায়েজ এবং সুন্নতও বটে। কনেও চাইলে বরকে দেখে নিতে পারে।

নবিজি (সা.) তার সাহাবিদের উৎসাহ দিতেন বিয়ের আগে কনেকে দেখে নিতে। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল রাসুল (সা.) বলেন, আপনাদের কেউ যখন কোনো নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেবেন, তখন সম্ভব হলে তার এমন কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে নেবেন, যা আপনাকে বিয়েতে আগ্রহী করে তোলে। (সুনানে আবু দাউদ: ২০৮২)

মুগিরা বিন শোবা (রা.) বলেন, আমি এক নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলাম। এটা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি তাকে দেখেছেন? আমি বললাম, না, দেখিনি। তখন তিনি বললেন, তাকে দেখে নিন। আপনার এই দেখা আপনাদের দাম্পত্য জীবনে প্রণয়-ভালোবাসা গভীর হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। (সুনানে তিরমিজি: ১০৮৭)

হবু বর-কনের সাক্ষাৎ হলে তারা একে অপরকে দেখতে পারে, কথা বলতে পারে। কিন্তু বিয়ে হয়ে যাওয়ার আগে একে অন্যকে স্পর্শ করতে পারে না। বরের জন্য হবু স্ত্রীর হাত বা কোনো অঙ্গ স্পর্শ করা নাজায়েজ। তাই বরের জন্য হবু স্ত্রীকে আংটি পরিয়ে দেওয়াও নাজায়েজ।

আংটি পরিয়ে দিতে চাইলে পাত্র পক্ষের মেয়েদের কেউ গিয়ে পরিয়ে দিতে পারে। অথবা পাশে পাত্রীর মাহরাম যারা থাকে তাদের কাছে দিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

আমাদের দেশে কনে দেখতে গিয়ে টাকা বা অন্য কিছু উপহার দেওয়ার প্রচলন আছে—এটা জায়েজ। হবু বর-কনে চাইলে পরস্পরকে উপহার দিতে পারে।

কনে দেখার বৈধতা শুধুমাত্র বর বা যে বিয়ে করবে তার জন্য। বরের বাবা, দাদা, ভাই, বন্ধু-বান্ধব বা অন্যান্য গায়রে মাহরাম পুরুষরা কনেকে দেখতে পারবে না।