মসজিদে তিলাওয়াত ও জিকিরের আদব

মসজিদে তিলাওয়াত ও জিকিরের আদব

ইসলামে মসজিদ অত্যন্ত সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ স্থান। কোরআনে আল্লাহ মসজিদকে নিজের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন এবং মসজিদ আবাদকারীদের প্রশংসা করেছেন। আল্লাহ বলেন,

اِنَّمَا یَعۡمُرُ مَسٰجِدَ اللّٰهِ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ اَقَامَ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَی الزَّکٰوۃَ وَ لَمۡ یَخۡشَ اِلَّا اللّٰهَ فَعَسٰۤی اُولٰٓئِکَ اَنۡ یَّکُوۡنُوۡا مِنَ الۡمُهۡتَدِیۡنَ

একমাত্র তারাই আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করবে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায়, ওরা হিদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সুরা বাকারা: ১৮)

মসজিদের মর্যাদা রক্ষা করা মুসলমানদের কর্তব্য ও তাকওয়ার দাবি। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন,.

ذٰلِکَ وَمَنۡ یُّعَظِّمۡ شَعَآئِرَ اللّٰهِ فَاِنَّهَا مِنۡ تَقۡوَی الۡقُلُوۡبِ

এটাই আল্লাহর বিধান এবং কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করলে এটাতো তার অন্তরের তাকওয়ারই বহিঃপ্রকাশ। (সুরা হজ্জ: ৩২)

মসজিদ ইবাদতের স্থান। মসজিদে দুনিয়াবি কাজকর্ম, কথাবার্তা থেকে বিরত থাকার যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত। কোরআনে আল্লাহ তাআলা মসজিদকে মর্যাদায় সমুন্নত করার ও মসজিদে তার নাম স্মরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং মসজিদে ইবাদতকারীদের প্রশংসা করেছেন। আল্লাহ বলেন,

فِیۡ بُیُوۡتٍ اَذِنَ اللّٰهُ اَنۡ تُرۡفَعَ وَ یُذۡکَرَ فِیۡهَا اسۡمُهٗ ۙ یُسَبِّحُ لَهٗ فِیۡهَا بِالۡغُدُوِّ وَ الۡاٰصَال رِجَالٌ لَّا تُلۡهِیۡهِمۡ تِجَارَۃٌ وَّ لَا بَیۡعٌ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ اِقَامِ الصَّلٰوۃِ وَ اِیۡتَآءِ الزَّکٰوۃِ ۪ۙ یَخَافُوۡنَ یَوۡمًا تَتَقَلَّبُ فِیۡهِ الۡقُلُوۡبُ وَ الۡاَبۡصَارُ

যেসব গৃহকে মর্যাদায় সমুন্নত করতে এবং তাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এমন ব্যক্তিরা যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয় বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামাজ কায়েম ও জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখেনা, তারা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। (সুরা নুর: ৩৬, ৩৭)

মসজিদে আল্লাহ তাআলার ইবাদত, নামাজ, তিলাওয়াত ও জিকিরে যে কোনোভাবে বাধা দেওয়া বা অসুবিধা সৃষ্টি করা অত্যন্ত গর্হিত গুনাহের কাজ। মসজিদে আল্লাহর ইবাদতে বাধা দেওয়া ও মসজিদকে বিরান করার চেষ্টাকে বড় জুলুম সাব্যস্ত করে কঠোর নিন্দা করা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنۡ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللّٰهِ اَنۡ یُّذۡكَرَ فِیۡهَا اسۡمُهٗ وَ سَعٰی فِیۡ خَرَابِهَا اُولٰٓئِكَ مَا كَانَ لَهُمۡ اَنۡ یَّدۡخُلُوۡهَاۤ اِلَّا خَآئِفِیۡنَ لَهُمۡ فِی الدُّنۡیَا خِزۡیٌ وَّ لَهُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ

তার চেয়ে বড় জালেম কে, যে আল্লাহর মাসজিদসমূহে তাঁর নাম স্মরণ করা থেকে বাধা প্রদান করে এবং তা বিরাণ করতে চেষ্টা করে? তাদের তো উচিৎ ছিল ভীত হয়ে তাতে প্রবেশ করা। তাদের জন্য দুনিয়ায় রয়েছে লাঞ্ছনা আর আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহাআজাব। (সুরা বাকারা: ১১৪)

এ আয়াতে মূলত খোদাদ্রোহী কাফের-মুশরিকদের কথা বলা হয়েছে, যারা মসজিদে যেতে, আল্লাহ তাআলার ইবাদত করতে মানুষকে বাধা দেয়, মসজিদ বিরান ও ধ্বংস করে। পাশাপাশি মসজিদে আল্লাহর ইবাদতে বাধা বা অসুবিধা সৃষ্টি হতে পারে এ রকম যে কোনো কাজও এই কঠোর নিন্দা ও শাস্তির অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

তাফসিরে মাআরেফুল কোরআনের লেখক মুফতি শফী (রহ.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, মসজিদ বিরান করার যত পন্থা আছে সবই নিষিদ্ধ। খোলাখুলিভাবে মসজিদ বিধ্বস্ত করা যেমন জুলুম ও গর্হিত গুনাহের কাজ, তেমনই এমন কাজগুলোও এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত, যাতে মসজিদ বিরান হয়ে যায়; নামাজের জন্য মানুষজন আসে না বা কম হয়। কারণ মসজিদ আবাদ হয় আল্লাহ তাআলার ইবাদতের মাধ্যমে, প্রাচীর বা কারুকার্য দিয়ে নয়। (তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন)

মসজিদে জোরে কথাবার্তা বলা, হট্টগোল করা এমন কি নামাজ আদায়ের সময় মসজিদে উচ্চৈস্বরে জিকির বা তিলাওয়াতও যদি ইবাদতকারীদের ইবাদতে অসুবিধা সৃষ্টি করে, তাহলে তা থেকেও বিরত থাকতে হবে।

মুফতি শফী (রহ.) আরও লিখেছেন, মসজিদে জিকির বা নামাজ থেকে বাধা দেওয়ার যে কোনো পন্থাই নাজায়েজ। তার মধ্যে একটি পন্থা হচ্ছে মসজিদে যেতে বা তাতে জিকির-ইবাদত করতে স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করা। আরেকটি পন্থা হচ্ছে মসজিদে হট্টগোল বা আশেপাশে গান-বাজনা করে মানুষের নামাজ বা জিকিরে বিঘ্ন সৃষ্টি করা। একইভাবে নামাজের সময় যখন মুসল্লিরা নফল নামাজ বা তাসবিহ কিংবা তিলাওয়াত ইত্যাদিতে মশগুল থাকে, তখন মসজিদে উচ্চৈস্বরে তিলাওয়াত বা জিকির করা, যাতে তাদের নামাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় হয় এটাও এক ধরনের বাধা প্রদান। তবে মসজিদে যখন মুসল্লী না থাকে তখন উচ্চস্বরে জিকির বা তিলাওয়াত করতে কোনো অসুবিধা নেই। (তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন)

সুতরাং মসজিদে তিলাওয়াত, দোয়া ও জিকিরের সময়ও খেয়াল রাখতে হবে তা যেন অন্য ইবাদতকারীদের অসুবিধার কারণ না হয়। মসজিদ খালি থাকলে উচ্চৈস্বরে জিকির ও তিলাওয়াত করা যেতে পারে। কিন্তু মসজিদে অন্যান্য মানুষজন ইবাদতরত থাকলে উচ্চৈস্বরে তিলাওয়াত বা জিকিরও করা যাবে না।