মোনাজাতের শুরুতে হামদ ও দরুদ পড়া অর্থাৎ আল্লাহর প্রশংসা করা ও নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি দরুদ পাঠ করা সুন্নত। তাই যে কোনো দোয়া করার সময় শুরুতেই হামদ ও দরুদ পাঠ করুন এভাবে, ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন ওয়াস-সালাতু ওয়াস-সালামু আলা সাইয়িদিল মুরসালিন ওয়া আলা আলিহি ওয়া সাহবিহি আজমাইন।’ অর্থাৎ সকল প্রশংসা জগৎসমূহের রব আল্লাহর। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক নবিদের সর্দারের ওপর এবং তার পরিবার-পরিজন ও সাহাবিদের ওপর।
ফুযালা ইবনে ওবাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক ব্যক্তিকে নামাজে দোয়া করতে শুনলেন, সে আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করেনি এবং নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি দরুদও পাঠ করেনি। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এই ব্যক্তি তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে, তারপর তিনি তাকে ডাকলেন এবং তাকে ও অন্যদেরও বললেন, আপনারা কেউ যখন নামাজ পড়বেন, তখন শুরু করবেন রবের প্রশংসা ও গুণাবলী বর্ণনার মাধ্যমে, তারপর নবির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি দরুদ পাঠ করবেন, তারপর যা ইচ্ছা দোয়া করবেন। (মুসনাদে আহমদ)
আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বলেন, একদিন আমি নামাজ পড়ছিলাম, নবিজি (সা.), আবু বকর ও ওমর (রা.) উপস্থিত ছিলেন। আমি যখন বৈঠকে বসলাম, তখন আল্লাহর প্রশংসা ও গুণাবলী বর্ণনা করলাম, তারপর নবিজির প্রতি দরুদ পাঠ করলাম, তারপর নিজের জন্য দোয়া করলাম। তখন নবিজি (সা.) বললেন, চাও, তোমাকে দেওয়া হবে; চাও, তোমাকে দেওয়া হবে। (সুনানে তিরমিজি)
এই দুটি হাদিসে নবিজি (সা.) যদিও বিশেষত নামাজে দোয়া করার পদ্ধতি শিখিয়েছেন, কিন্তু তা নামাজে ও নামাজের বাইরে সব মোনাজাত ও দোয়ার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। নবিজির (সা.) এই কথার ওপর ভিত্তি করে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলতেন, আপনারা কেউ যদি রবের কাছে কোনো দোয়া (নামাজে ও নামাজের বাইরে যে কোনো দোয়া) করতে চান, তাহলে আগে আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা ও গুণাবলী বর্ণনা করবেন, তারপর নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি দরুদ পাঠ করবেন, তারপর দোয়া করবেন। এভাবে দোয়া করলে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। (তাবরানি)
আল্লাহর কাছে হাত না তুলেও দোয়া করা যায়, নিজের প্রয়োজন তুলে ধরা যায় বা ক্ষমা প্রার্থনা করা যায়। তবে নামাজের বাইরে দোয়া করার সময় হাত ওঠানো মুস্তাহাব। বেশ কিছু হাদিসে হাদিসে দোয়ার সময় হাত ওঠানোর কথা এসেছে।
সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের রব অত্যন্ত লজ্জাশীল ও দয়ালু। বান্দা যখন তাঁর কাছে কিছু চেয়ে হাত ওঠায় তখন তার হাত খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। (সুনানে তিরমিজি)
মালেক ইবনে য়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আল্লাহর নিকট দোয়ার সময় হাতের তালু ওপরে সম্মুখে রেখে দোয়া করবে, হাতের পৃষ্ঠ ওপরে রেখে নয়। (সুনানে আবু দাউদ)
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, বান্দার সব দোয়াই কবুল হয় যদি না সে কোনো অন্যায় অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদের জন্য দোয়া করে এবং তাড়াহুড়া করে। এক সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, দোয়ার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করার মানে কী? রাসুল (সা.) বললেন, সে বলতে থাকে, আমি তো দোয়া করেছি, আমি তো দোয়া করেছি, কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হচ্ছে না! এভাবে হাহুতাশ করে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং দোয়া করা ছেড়ে দেয়। (সহিহ মুসলিম)
ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, মোনাজাত বা দোয়ার আদব হলো চাইতে থাকা, নিরাশ না হওয়া। এতে আনুগত্য, আত্মসমর্পণ ও আল্লাহর কাছে বান্দার মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ পায়। পূর্ববর্তী আলেমদের অনেকে বলেছেন, আমি দোয়া কবুল না হওয়ার চেয়ে দোয়া থেকে বঞ্চিত হওয়াকে বেশি ভয় করি। (ফাতহুল বারি)