রমজান মাসের রোজা প্রাপ্তবয়স্ক সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর ফরজ। তবে অসুস্থতা, সফর ইত্যাদি গ্রহণযোগ্য শরঈ কারণ থাকলে রমজানে রোজা ভেঙে পরবর্তীতে কাজা করা যায়। আল্লাহ বলেন,
شَهۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡهِ الۡقُرۡاٰنُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡهُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ فَمَنۡ شَهِدَ مِنۡکُمُ الشَّهۡرَ فَلۡیَصُمۡهُ وَ مَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ
রমজান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। (সুরা বাকারা: ১৮৫)
এ ছাড়া রমজানের দিন রোজা রেখে ইচ্ছাকৃত রোজা পানাহার বা যৌনমিলন করলে রোজা ভেঙে যাবে, রোজাটির কাজা করতে হবে, কাফফারাও দিতে হবে। অর্থাৎ ওই রোজাটির পরিবর্তে আরেকটির রোজা রাখার পাশাপাশি একটি গোলাম আজাদ করতে হবে অথবা ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা ভালোভাবে তৃপ্তিসহকারে আহার করাতে হবে অথবা ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজা রাখতে হবে। এ ছাড়া আরও কিছু কারণে রোজা ভেঙে যায়, কিন্তু শুধু কাজা ওয়াজিব হয়, কাফফারা দিতে হয় না।
রোজা ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফরজ আমল, ইমানের পর ইসলামের মূল পাঁচ স্তম্ভের অন্তর্ভুক্ত। কোনো অসুস্থতা, অসুবিধা বা অবহেলায় রোজা ছুটে গেলে যত দ্রুত সম্ভব আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে ওই নামাজ ও রোজার কাজা আদায় করা এবং কাফফারা ওয়াজিব হলে কাফফারা আদায় করা উচিত।
যে কোনো নফল রোজার চেয়ে কাজা রোজা রাখার গুরুত্ব বেশি। তাই রোজা রাখার সুযোগ পেলে সাধারণ নফল রোজা না রেখে কাজা রোজাই রাখা উচিত। তবে কাজা রোজা সবগুলো রেখে শেষ না করলে নফল রোজা রাখা নিষিদ্ধ নয়। কাজা রোজা ওয়াজিব থাকা অবস্থায় নফল রোজা রাখলে তা শুদ্ধ হবে না এ রকম কোনো বিধানও নেই।
রমজানের ফরজ রোজা ও নফল রোজার নিয়ত রাতে করা উত্তম। যদি কেউ রাতে নিয়ত না করে তাহলে দিনের বেলা মধ্য আকাশ থেকে সূর্য পশ্চিমে ঢলার দেড় ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত নিয়ত করা যাবে। শর্ত হলো, সুবহে সাদিকের পর থেকে নিয়তের পূর্ব পর্যন্ত রোজার পরিপন্থী কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সুবহে সাদিকের পর রোজার পরিপন্থী কোনো কাজ করলে অর্থাৎ কিছু খেলে, পান করলে বা রোজা ভেঙে যায় এমন কিছু করলে আর রোজার নিয়ত করার সুযোগ থাকবে না।
কাজা ও কাফফারার রোজার নিয়ত রাতেই করতে হয়। সুবহে সাদিকের পর রমজান বা নফল রোজার কাজা কাফফারার রোজার নিয়ত করা যায় না। এ ছাড়া কেউ যদি অনির্দিষ্টভাবে যে কোনো দিন রোজা রাখার মানত করে, তাহলে ওই মানতের রোজার নিয়তও রাতে অর্থাৎ আগের দিন সূর্যাস্তের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত যে কোনো সময় করা জরুরি।
কারো যদি একাধিক রমজানের রোজা কাজা হয়ে যায়, তাহলে কাজা আদায় করার সময় কোন রমজানের রোজার কাজা আদায় করছে এটা নির্দিষ্ট করে নিয়ত করা জরুরি। তবে যদি কাজা রোজার সংখ্যা অনেক বেশি হয় এবং তা নির্দিষ্ট করা কঠিন হয় তাহলে ‘জীবনের সর্বপ্রথম কাজা রোজা রাখলাম’ এভাবেও নিয়ত করা যাবে।
নিয়ত বলা হয় মূলত অন্তরের ইচ্ছাকে। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। অন্তরে কেউ যদি ইচ্ছা করে যে ‘আগামীকাল আমি রোজা রাখবো’ এটাই নিয়ত গণ্য হবে। তবে নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা উত্তম। যারা আরবি জানে না তারা বাংলায়ই মুখে উচ্চারণ করে রোজার নিয়ত করতে পারেন। অন্তরে রোজার ইচ্ছার সাথে সাথে মুখে এভাবে বলবেন, ‘আমি আগামীকাল রোজা রাখার নিয়ত করলাম’।
রোজা রাখার জন্য সাহরি খাওয়া জরুরি নয়। কেউ যদি রাতে রোজা রাখার নিয়ত করে ঘুমায়, সকালে সুবহে সাদিকের পর ঘুম থেকে জাগে, তাহলে তার ওই রোজা শুদ্ধ হবে। রমজানের রোজা ও নফল রোজার ক্ষেত্রে রাতে নিয়ত করে না ঘুমালেও সুবহে সাদিকের পর ঘুম থেকে উঠে নিয়ত করলে রোজা শুদ্ধ হবে।