রেয়াল মাদ্রিদকে এগিয়ে নেওয়ার আনন্দে ডানা মেললেন গন্সালো গার্সিয়া। তার গোলেই শেষ পর্যন্ত ক্লাব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠেছে রেয়াল মাদ্রিদ। ছবি: রেয়াল মাদ্রিদের ফেইসবুক

ইউভেন্তুসকে হারিয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে রেয়াল মাদ্রিদ

আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠা ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ হেডে ‘ডেডলক’ খুললেন গন্সালো গার্সিয়া। এগিয়ে গেল রেয়াল মাদ্রিদ। সমতায় ফিরতে মরিয়া ইউভেন্তুসও হাল না ছেড়ে লড়ে গেল শেষ পর্যন্ত, কিন্তু পেল না সমতায় ফেরা গোলের দেখা। স্বস্তির জয়ে ক্লাব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালের মঞ্চে উঠল শাবি আলোন্সোর দল।

ফ্লোরিডার হার্ড রক স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রাতে শেষ ষোলোর ম্যাচে ইউভেন্তুসকে ১-০ গোলে হারিয়েছে প্রতিযোগিতার রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন রেয়াল।

এই হাই-ভোল্টেজ ম্যাচ দিয়ে চলতি আসরে প্রথম খেলতে নামলেন কিলিয়ান এমবাপে। জ্বরের কারণে আগের ম্যাচগুলো খেলতে পারেননি এই ফরাসি ফরোয়ার্ড।

বলের নিয়ন্ত্রণে দুই দল প্রায় সমানে-সমান। আক্রমণে এগিয়ে ছিল রেয়াল, তাদের ২২টি প্রচেষ্টার ১১টি থাকে লক্ষে, ঠিকানা খুঁজে পায় কেবল গন্সালোর হেড। অন্যদিকে ৬ আক্রমণের ২টি লক্ষে রাখে ইউভেন্তুস। অবশ্য আক্রমণগুলো ধারালো না হলেও ম্যাচে প্রথম সুবর্ণ সুযোগটি পেয়েছিল ইউভেন্তুসই।

সপ্তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণ থেকে দারুণ ফ্লিকে কেনান ইলডিজকে বল বাড়িয়ে ছুটতে থাকেন কোলো মুয়ানি। সতীর্থের থ্রু পাস ধরে আন্টোনিও রুডিগারকে গতিতে পেছনে ফেলে বক্সে ঢুকে গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে একা পেয়েও গিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু এই ফরাসি ফরোয়ার্ডের চিপ শট ক্রসবার ঘেঁষে উপরের জাল কাঁপায়।

২৪তম মিনিটে অহেলিয়া চুয়ামেনি বক্সের বাইরে থেকে আচমকাই শট নেন, কিন্ত এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে বাইরে দিয়ে যায়। সেই কর্নারও কাজে লাগাতে পারেনি রেয়াল। স্পেনের সফলতম দলটির সেরা সুযোগটি নষ্ট হয় ২৯তম মিনিটে। ভালভের্দের আড়াআড়ি ক্রসে ছোট বক্সের ভেতর থেকে শটও নিয়েছিলেন জুড বেলিংহ্যাম, কিন্তু গোলরক্ষকের গায়ে লেগে বল বেরিয়ে যাওয়ার পর গোললাইনের একটু উপর থেকে ফেরান দানিয়েল রুগানি।

কুলিং ব্রেকের পর ৩৭তম মিনিটে আর্দা গিলেরের ক্রসে বক্সের ভেতর থেকে চুয়ামেনি মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ, এরপর ডিন হাউসেন পা চালালেও বলের সাথে সংযোগ ঘটাতে পারেনি। তাতে আরেকটি ভালো সুযোগ নষ্ট হলেও ম্যাচে বাড়তে থাকে রেয়ালের আধিপত্য।

যোগ করা সময়ে ইউভেন্তুসের বক্সে বেশ চাপ দিতে থাকে রেয়াল। কিন্তু গোল আদায় করে নিতে পারেনি এই প্রতিযোগিতার ২০২২ সালের চ্যাম্পিয়নরা। প্রথম মিনিটে ভালভের্দের দূরপাল্লার শট ঝাঁপিয়ে ব্যর্থ করে দেন ইউভেন্তুস গোলকিপার।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেলিংহ্যামের পাস ধরে ভালভের্দের শট থাকেনি লক্ষে। ৫২তম মিনিটে বেলিংহ্যামের প্রচেষ্টাও দেখেনি আলো মুখ। তবে ইউভেন্তুসের রক্ষণে চাপ ধরে রাখার ফল দ্রুতই পেয়ে যায় রেয়াল। ৫৪তম মিনিটে ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার-আর্নল্ডের ক্রসে অনেকটা লাফিয়ে হেডে জাল খুঁজে নেন গার্সিয়া। চলতি আসরে এই তরুণ স্প্যানিশ ফরোয়ার্ডের গোল হলো ৩টি।

দুই মিনিট পরই সমতার স্বস্তি সঙ্গী হতে পারত ইউভেন্তুসের। কিন্তু ফ্রান্সিসকোর গতিময় নিচু শট দারুণ ক্ষিপ্রতায় আটকে দেন কোর্তোয়া। একটু পর ভালভের্দের ওভারহেড কিক ফিস্ট করে ফিরে ব্যবধান দ্বিগুণ হতে দেননি ইউভেন্তুস গোলকিপার মিশেল দি গ্রেগরিও।

৬৮তম মিনিটে গার্সিয়াকে তুলে নেন রেয়াল কোচ। ভক্তদের তুমুল করতালির মধ্যে চলতি টুর্নামেন্টে প্রথম খেলতে নামেন এমবাপে। কিছু ঝলক দেখালেও তিনি ছিলেন না সেরা ছন্দে।

দি গ্রেগরিও ৭২তম মিনিটে আবারও হতাশ করেন রেয়ালকে। লেফট উইং ধরে আক্রমণে ওঠা ভিনিসিউস জুনিয়রের পাস ধরে এমবাপে ক্রস বাড়ান বক্সে। ভালভের্দের ব্যাক পাসে গিলেরের বুলেট গতির শট কোনোমতে পা দিয়ে আটকান গোলরক্ষক।

প্রচন্ড গরমের কারণে ৭৫তম মিনিটে দেওয়া হয় দ্বিতীয় কুলিং ব্রেক। সাত মিনিট পর চুয়ামেনির শট ঝাঁপিয়ে আটকে ইউভেন্তুসের আশা কিছুটা হলেও বাঁচিয়ে রাখেন দি গ্রেগরিও। শেষ দিকে কোলো মুয়ানি বক্সে পড়ে গেলে পেনাল্টি আবেদন করে ইউভেন্তুস, কিন্তু রেফারির সাড়া না মেলায় হারের হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।