রক্তিম আভায় মহাকালের খাতায় দিয়েগো জোতা

রক্তিম আভায় মহাকালের খাতায় দিয়েগো জোতা

আটলান্টিকের উপকণ্ঠে পর্তুগিজ নগরী পোর্তো। যেখানে জন্ম নেন দিয়েগো জোতা। মহাসাগরের মতো মহাকাব্যিক ক্যারিয়ার বা দীর্ঘজীবন হয়ত পাননি তিনি। ২৮ বছরের জীবনে দেশের হয়ে মহাদেশীয় দুটি ট্রফি জিতেছেন। ক্লাব ক্যারিয়ারে শতাধিক গোল, জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব আর তিন সন্তান— জোতার বায়োগ্রাফিতে এই উপাদানগুলোই মুখ্য। পর্তুগাল ও লিভারপুলের রক্তিম জার্সির মতোই দুর্ঘটনায় মহাসড়কে রক্তাক্ত দেহ জানান দিল এভাবে জোতা অধ্যায় শেষ না হলেও পারতো। তবে ভাগ্যবিধাতা হয়ত এমন কিছুই লিখে রেখেছিলেন।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) স্পেনের জামুরায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই সহোদরসহ নিহত হন এ লিভারপুল মিডফিল্ডার।

Liverpool Football Club are devastated by the tragic passing of Diogo Jota.

গত মাসেই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন জোতা। দীর্ঘদিনের প্রেমিকা রুট কার্ডোসোর সঙ্গে ২২ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে গাঁটছড়া বাঁধেন তিনি। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে বিয়ের একটি ছবি প্রকাশ করেন রুট, যার ক্যাপশনে জোতা পত্নী লেখেন, আমার স্বপ্ন সত্যি হলো। সেই ছবির কমেন্ট বক্সে জোতা লেখেন, আমি ভাগ্যবান। এই দম্পতির দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। সদ্যই শুরু হওয়া এক পারিবারিক স্বপ্নিল যাত্রার ইতি এমনভাবে ঘটবে, কেউ হয়ত কল্পনাও করেনি।

স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে জোতা।

২০১৪ সালে পর্তুগাল অনুর্ধ্ব-১৯ ও প্রিমেইরা লিগের ক্লাব পাসোস দে ফেরেইরাতে নিজের পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেন জোতা। এরপর দেশটির আরও দুইটি বয়সভিত্তিক (অনুর্ধ্ব-২১ ও ২৩) দলেও দেখা যায় তাকে।

২০১৬ সালে স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সঙ্গে চুক্তি হলেও তাকে ক্লাব কর্তৃপক্ষ লোনে খেলতে পাঠায় স্বদেশী ক্লাব পোর্তোতে। ২৭ ম্যাচে ৮টি গোলও করেন এই ক্লাবের হয়ে।

পোর্তো পর্ব শেষে তাকে উলভারহ্যাম্পটনে পাঠায় মাদ্রিদের ক্লাবটি। লোন পর্বে ৪৪ ম্যাচে ১৭ গোল ও দুর্দান্ত মাঝমাঠের পারফরম্যান্সের সুবাদে এবার তাকে নিজেদের ঘরের ছেলে করে নেয় ইংলিশ ক্লাবটি। এরপর ৬৭ ম্যাচে ক্লাবটির প্রতিনিধিত্ব করেন জোতা, গোল করেন ১৬টি।

পর্তুগালের হয়ে দুটি উয়েফা নেশন্স লিগ জিতেছেন জোতা।

ইংল্যান্ডে উলভারহ্যাম্পটনে হয়ে ভালো খেলায় ২০২০ সালে তাকে দলে টেনে নেয় লিভারপুল। ইতোমধ্যে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকও হয়ে গেছে তার। রোনালদো-ফেলিক্সদের সাথে ড্রেসিংরুমও ভাগ করে নিয়েছেন। পরের বছর ইউরোতে জার্মানির বিপক্ষে আলিয়াঞ্জ এরেনায় দুর্দান্ত এক গোল করেন জোতা। দল আসর থেকে বিদায় নিলেও, ওই গোলটি ফুটবল ভক্তদের এখনও চোখের প্রশান্তি দেয়।

লিভারপুলের হয়ে ২০২৪-২৫ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জেতেন এ মিডফিল্ডার।

লিভারপুল অধ্যায়টাই জোতার জীবনের স্বর্ণালী এক সময়। ক্লাবটির হয়ে শতাধিক ম্যাচে মাঠে নেমেছেন। পাশপাশি পর্তুগালকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন ৪৯টি ম্যাচে। দু’বার (২০১৯, ২০২৫) উয়েফা নেশন্স লিগের শিরোপার সঙ্গে অলরেডসদের হয়ে জিতেছেন প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ ও লিগ কাপ— ২৮ বছরের জীবনে ক্যারিয়ার কিংবা পরিসংখ্যান খুব একটা সাদামাটা যে নয়, এটি বলা-ই যায়।

/এমএইচআর