কঠিন ‘চ্যালেঞ্জ’ নিয়েই ঢাকায় এসিসি’র সভা

কঠিন ‘চ্যালেঞ্জ’ নিয়েই ঢাকায় এসিসি’র সভা

ভারতের তীব্র আপত্তি এবং বয়কটের হুমকির মুখেও আজ থেকে ঢাকায় শুরু হচ্ছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, আজ-কাল রাজধানীর একটি পাঁচতারা হোটেলে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এসিসি’র চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি ইতিমধ্যেই ঢাকায় পৌঁছেছেন, যা সভা আয়োজন নিয়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা দূর করেছে। বিসিসিআই আগেই জানিয়েছিল যে তারা বাংলাদেশে এসিসি’র সভায় অংশ নেবে না। শুধু ভারতই নয়, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান এবং ওমানও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সভা বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। ভারতের এই বয়কটের ডাকের পর এসিসি’র সভা আদৌ ঢাকায় হবে কিনা, তা নিয়ে এক বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। তবে গতকাল সকালে এসিসি চেয়ারম্যানের আগমনের মধ্য দিয়ে সেই শঙ্কা কেটে গেছে। হযরত শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান- বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ভারতের আপত্তির পরও ঢাকায় এই সভার আয়োজন নিয়ে বিসিবি সভাপতি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘বিসিবি এখানে শুধুমাত্র আয়োজক। আমরা এসিসি’র সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। কারা আসছে বা আসছে না, তাদের কখন বিমানবন্দর থেকে আনতে হবে, হোটেলে বুকিং দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে আমরা লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছি। এর বাইরে আমাদের আর কোনো কাজ নেই।’

অন্যদিকে এই সভা কোরাম সংকটের কারণে ব্যর্থ হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শেষপর্যন্ত তা নাও হতে পারে বলে জানা গেছে। এসিসি’র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সভা অনুষ্ঠিত হতে হলে টেস্ট খেলুড়ে পাঁচটি দেশের মধ্যে অন্তত তিনটি এবং সহযোগী ১০টি দেশের উপস্থিতি আবশ্যিক। ভারত, শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি আফগানিস্তানও এসিসি’র বার্ষিক সভা বয়কটের ঘোষণা দিলেও, জানা গেছে যে, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এবং বিসিবি যৌথভাবে আফগানিস্তানকে রাজি করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গুঞ্জন রয়েছে, আফগানিস্তান মৌখিকভাবে এজিএম-এ অংশগ্রহণের সম্মতিও দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত যদি আফগানিস্তান পিছু না হটে, তবে সভা স্থগিত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তবে, যদি আফগানিস্তান শেষ মুহূর্তে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে, তাহলে কোরাম সংকটের কারণে এজিএম স্থগিত হতে পারে। গতকাল পর্যন্ত ১৯টি দলের অংশগ্রহণের সম্মতি পাওয়া গেছে এবং ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা ঢাকায় পৌঁছেছেন।

এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বর্তমান প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। তার কারণে এসিসি’র কার্যক্রমে ভারতীয় বোর্ডের অনীহা আরও প্রকট হয়েছে। ভারত বরাবরই এসিসিকে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না, আর নাকভি দায়িত্ব নেয়ার পর সেই উদাসীনতা যেন আরও স্পষ্ট হয়েছে। দুই দেশের রাজনৈতিক টানাপোড়েন দীর্ঘদিনের, যার প্রভাব এবার ক্রিকেট প্রশাসনেও পড়েছে। গত এপ্রিলে কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর দুই দেশের সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে পড়ে, একইসঙ্গে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যকার যোগাযোগেও প্রভাব পড়েছে। ফলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ আয়োজন কিংবা কোনো যৌথ পরিকল্পনার সম্ভাবনা কার্যত শূন্যে এসে ঠেকেছে। অন্যদিকে ভারত না এলেও এই সভা থেকে লাভ খুঁজছে বিসিবি। এই সভায় বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বাড়ানো নিয়ে আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে বিসিবি সভাপতির। তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তানের বোর্ড চেয়ারম্যান এখন এসিসিরও প্রধান। তিনি এসিসি’র অনুষ্ঠানেই আসছেন। এর মাঝে যদি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বাড়ানো বা ক্রিকেট নিয়ে অন্য কোনো আলোচনার সুযোগ থাকে, সেই চেষ্টা করা হবে।’
তবে বাংলাদেশের এই অঞ্চলের ক্রিকেট রাজনীতির সমীকরণে বিপাকে পড়ার সম্ভাবনা নিয়ে বুলবুল বলেছেন, ‘আমার মনে হয় না (সমস্যা হবে)। ক্রিকেট সবার ওপরে। এই ধরনের সমস্যা হবে না বলেই মনে করি। আমি আবারও বলছি, আমরা কেবলই আয়োজক। আগে কখনও আমরা এজিএম হোস্ট করিনি। বোর্ডের সবাই মিলে, দেশের সবাই মিলে আমরা চেষ্টা করবো যেন ভালো একটা এজিএম হয়।’ সব মিলিয়ে, এসিসি’র এই সভা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ নিজেদের ক্রিকেট সংস্কৃতি এবং আয়োজক সক্ষমতা প্রদর্শনের। তবে, ভারতের অনুপস্থিতি এবং এশিয়া কাপের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা এই সভার গুরুত্বকে কিছুটা হলেও ম্লান করে দিয়েছে। এই সভায় এশিয়া কাপের ভাগ্য নির্ধারিত না হলেও, এশিয়ান ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ গতিপথ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে বলেই আশা করা যায়।