শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ হরের পর বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজের শেষ টেস্ট শেষে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বড় ফরম্যাটে অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন শান্ত। প্রথম টেস্ট ড্র করলেও দ্বিতীয় ম্যাচ ইনিংস ও ৭৮ রানের ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে হেরেছে টাইগাররা। টেস্ট সিরিজ শেষে সাংবাদিকদের শান্ত বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। আমি টেস্ট ফরম্যাটে আর দায়িত্ব পালন করতে চাই না। আমি সবাইকে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এটা কোন ব্যক্তিগত কিছু নয়। পুরোপুরি দলের ভালোর জন্য এই সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছি এবং আমি মনে করি এটাতে দলের ভালো কিছু হবে।’ শান্ত আরও বলেন, ‘এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত যে তিন অধিনায়ক দলের জন্য একটু কঠিন হতে পারে। দলের ভালোর জন্য আমি এখান থেকে সরে এসেছি। বোর্ড যদি মনে করে আলাদাভাবে তিনটা অধিনায়ক তারা রাখবে এটা একেবারেই তাদের সিদ্ধান্ত। আমি আশা করব এই জিনিসটা কেউ যেন মনে করে না যে, আমি ব্যক্তিগত কোন কিছু থেকে বা আমার মন খারাপ থেকে রাগ থেকে এটা করেছি। এটা আমি পরিষ্কার করলাম। এটা শুধু দলের ভালোর জন্য। এখানে ব্যক্তিগত কিছু নেই।’ গলে প্রথম টেস্টে দারুণ পারফরম্যান্সের পর এমন পরাজয়ে বেশ হতাশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। এক প্রশ্নের জবাবে শান্ত বলেছেন, ‘প্রথম টেস্টে যেভাবে শেষ করেছিলাম, এরপর এই টেস্টের ফল খুব হতাশাজনক। প্রথম ইনিংসে আমাদের ব্যাটিং মানদণ্ডে পৌঁছায়নি। সুযোগ ছিল কিন্তু কাজে লাগাতে পারিনি।’ ব্যাটিং ব্যর্থতায় উইকেটের কোনও দায় দেননি শান্ত। তার মতে ব্যাটারদের আউটের ধরন কোনোভাবেই গ্রহযোগ্য নয়, ‘আমি এখনও মনে করি আমাদের ব্যাটিং করা উচিত ছিল আগে। উইকেট একটু ধীর গতির ছিল ঠিকই, কিন্তু যেভাবে আমরা আউট হয়েছি, তা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা সবসময় সহজ অপশন বেছে নিয়েছি আর ভুল করেছি।’ তবে ব্যাটিং ব্যর্থতার মাঝেও বোলারদের কাজ প্রশংসা পেয়েছে অধিনায়কের মুখে, ‘তৃতীয় দিনে আমরা যেভাবে বোলিং করেছি, তা এই ধরনের কন্ডিশনে দারুণ। সেটা দেখে ভালো লেগেছে।’ শান্ত সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার কারণে বিদেশের মাটিতে টেস্ট পারফরম্যান্স ভালো হচ্ছে। উন্নতি হলেও দলের ধারাবাহিকতা নিয়ে চিন্তিত সদ্য বিদায়ী এই অধিনায়ক, ‘আপনি যদি শেষ দুই-এক বছরের টেস্ট দল দেখেন আমরা দেশের বাইরে এসে এখন জিতছি বা ড্র করছি। আগের থেকে যদি আপনি বলেন, এখন ভালো হয়েছে। তবে ধারাবাহিকতার জায়গায় ঘাটতি আছে। খেলায় হারজিত থাকবে। আমার মনে হয় যে, প্রথম টেস্টটি আমরা যেভাবে আধিপত্য দেখিয়ে খেললাম, এই টেস্টটা আরেকটু ভালো খেলতে পারতাম। তাহলে উন্নতির জায়গাটা আমরা দেখতে পেতাম।' শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ১-০ ব্যবধানে হারলেও শান্ত ইতিবাচক অনেক কিছুই খুঁজে পেয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয় নাঈমের বোলিংটা আমরা এই সিরিজ থেকে নিতে পারি। সাতটা টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছে তার। ডিফিকাল্ট, এভাবে সেরকম পারফর্ম করা, স্পেশালি এই টেস্ট ম্যাচের শুরুর কয়েকটা ওভার ভালো না করার পরে যেভাবে তৃতীয় দিনে বোলিং করে কামব্যাক করেছে।তাইজুল ভাই, আমরা সবসময় জানি যে তিনি দলের জন্য ৪০-৪৫ ওভার করে বল করে। এটা কিন্তু অনেক কঠিন একটা ব্যাপার, ওই একই জায়গায়।' শান্ত আরও বলেছেন, ‘তাই তাইজুল ভাইয়ের পাঁচ উইকেট বা লম্বা স্পেল বোলিং করা।
সুতরাং, এই জিনিসগুলো আমরা নিয়ে যেতে পারি। মুশফিক ভাই অনেকদিন পরে এরকম একটা লম্বা ইনিংস খেলেছে। সো, ওভারঅল বেশ কিছু জায়গা আছে যেগুলা নিয়ে আমরা সামনে আগাতে পারি। ওয়ানডে সিরিজে আমার মনে হয় না এই সিরিজ থেকে খুব বেশি কিছু আমাদের নিয়ে যাওয়াটা ঠিক হবে, কারণ আলাদা ফরম্যাট। তাই ওটা আলাদাভাবে চিন্তা করাটাই ভালো।' ২০২৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তিন ফরম্যাটে অধিনায়কের দায়িত্ব পান শান্ত। গত ৪ মে টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব দেয়া হয় পান লিটন দাসকে। তখন টেস্টের সাথে ওয়ানডের অধিনায়ক থাকেন শান্ত। তবে গত ১২ জুন শান্তর জায়গায় ওয়ানডের অধিনায়ক দেয়া হয় মেহেদি হাসান মিরাজকে। এরপর শুধু টেস্টের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। বাংলাদেশকে ১৪ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন শান্ত। তার অধীনে ৪টিতে জয়, ৯টিতে হার এবং এক টেস্ট ড্র করেছে বাংলাদেশ।
শান্ত নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয় এবং পাকিস্তানের মাটিতে ২-০ ব্যবধানে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক হিসেবে ১৪ টেস্টে ৩ সেঞ্চুরি ও ২ হাফ-সেঞ্চুরিতে ৩৬ দশমিক ২৪ গড়ে ৯০৬ রান করেছেন শান্ত।