ঈদের ছুটিতে লাখো পর্যটকের আগমনে মুখরিত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

ঈদের ছুটিতে লাখো পর্যটকের আগমনে মুখরিত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

শাহনেওয়াজ জিল্লু, কক্সবাজার দক্ষিণ সংবাদদাতা: ঈদ-উল আজহার ছুটিতে সারাদেশ থেকে পর্যটকদের ঢল নেমেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে। দীর্ঘ সৈকতজুড়ে পর্যটকদের জমজমাট ভিড় লক্ষ্য করা গেছে; এই বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমনে কক্সবাজারের অর্থনীতিতে চাঙ্গা ভাব দেখা গেছে। কক্সবাজারে ৫শ’টিরও বেশি হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ ও গেস্ট হাউস রয়েছে, যেগুলোর দৈনিক ধারণক্ষমতা প্রায় ১ লক্ষ ৮৭ হাজার জন বলে তথ্য দিয়েছে হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতি। হোটেল মালিকরা জানান- ১২ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৭০ হাজারের বেশি পর্যটক আসবেন। এসব মিলিয়ে এবারের ঈদে মোট পর্যটকের সংখ্যা ৯ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, “ঈদুল ফিতরে প্রায় ১২ লাখ পর্যটক এসেছিল এবং ১৩টি খাতে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছিল। এবারে ৮ থেকে ৯ লাখ পর্যটক আশা করছি এবং সবমিলিয়ে অন্তত ৭শ’ কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে বিশ্বাস করি।” “কেবল হোটেল নয়, রেস্টুরেন্ট, দোকানপাট, বিচ অ্যাকটিভিটিজ, লোকাল ট্রান্সপোর্ট এবং অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোতেও জমজমাট ব্যবসা হচ্ছে” -বলেন মি. চৌধুরী। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান- ঈদের পরদিন ৮ জুন থেকে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। মুকিম জানান- “এটি বছরের অন্যতম পিক টাইম। ৯ ও ১০ জুন প্রতিদিন ১ থেকে ১.৫ লাখ পর্যটক এসেছেন। বিলাসবহুল হোটেল-মোটেল-রিসোর্টগুলোর ৯৫ শতাংশ রুম অগ্রিম বুক করা ছিলো”। এই ব্যবসায়ী আরও জানান- কোনও বড় অফার না থাকলেও চাহিদা এত বেশি যে রুম ভাড়ার দরদাম করার সুযোগ নেই। “অফসিজনে যেসব হোটেল ৫০-৭০ শতাংশ ছাড় দেয়, তারা এখন সর্বোচ্চ ১০-২০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে” -বলেন মুকিম।

কলাতলী হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী- সৈকতের পাশের দোকানগুলোর বিক্রি ঈদের সময় তিনগুণ বেড়েছে। ঢাকা থেকে আগত পর্যটক আরাফাত রহমান বলেন- “আবহাওয়া ভালো, ভিড়ও প্রচুর। খাবার, ঘোড়ার পিঠে চড়া বা বাইক ভাড়ার দাম বেড়েছে, তবে পরিবেশ জমজমাট, আর ব্যবসার দিক থেকে স্পষ্টতই লাভজনক।”

সৈকতের বাইরেও ঈদ ভ্রমণকারীরা ভিড় করছেন মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি ঝরণা, ইনানি ও পটুয়ারটেকের পাথুরে সৈকত, রামুর বৌদ্ধ মঠ, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, বার্মিজ মার্কেট, রেডিয়ান্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড এবং দুলাহাজরা সাফারি পার্কে। এদিকে, সমুদ্র উত্তাল থাকায় এবং সৈকতের কিছু অংশে গভীর গর্ত ও বিপরীত স্রোতের কারণে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কর্তৃপক্ষ। পর্যটকদের সতর্ক করতে লাল পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে, তবুও অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে পানিতে নামছেন।

সোমবার সদরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে পাঁচটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন পর্যটক, একজন স্থানীয় ও একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি রয়েছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশ, মোবাইল ইউনিট ও লাইফগার্ডরা সমন্বিতভাবে কাজ করছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতও কাজ করছে যাতে পর্যটকরা হয়রানির শিকার না হন এবং নিয়ম মানা হয়। সি-সেইফ লাইফগার্ডের জ্যেষ্ঠ সদস্য মোহাম্মদ সিফাতুল্লাহ সিফাত বলেন- “আমাদের দল টাওয়ার থেকে নজরদারি করছে, সৈকতে টহল দিচ্ছে এবং নৌকা নিয়ে পানিতে পাহারা দিচ্ছে। তবে পর্যটকদেরও নিজ দায়িত্বে সতর্ক থাকতে হবে।”