চট্টগ্রামে ঈদের আনন্দে মুখর বিনোদন কেন্দ্রগুলো

চট্টগ্রামে ঈদের আনন্দে মুখর বিনোদন কেন্দ্রগুলো

ঈদুল আজহার ছুটিকে ঘিরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। নানা বয়সের মানুষজন পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে এসেছেন প্রকৃতির সান্নিধ্যে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। চট্টগ্রামে এবারের ঈদ উৎসব হয়ে উঠেছে পারিবারিক আনন্দ-ভ্রমণের এক রঙিন উপলক্ষ।

চট্টগ্রাম নগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকা ছাড়াও রাজধানী ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটকরা ভিড় করছেন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, ফয়’সলেক, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সৈকত এবং মীরসরাইয়ের মহামায়া লেকে। সাগর আর পাহাড়ে ঘেরা এই বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঈদের পরদিন থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে।

ঈদের দিন কোরবানির ব্যস্ততায় দর্শনার্থীর চাপ কম থাকলেও পরদিন রোববার, সোমবার ও মঙ্গলবার থেকে তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। বিশেষ করে সোমবার সকাল থেকেই পতেঙ্গা সৈকতে পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে করে মানুষজন পরিবার নিয়ে ছুটে আসেন সৈকতের পাড়ে। দুপুর গড়ানোর পর সৈকতের বালুচরে নামে উপচে পড়া ভিড়।

শিশু-কিশোরদের ছুটোছুটি, সাগরের ঢেউয়ে মেতে ওঠা, ফুচকাওয়ালার হাঁকডাক, গরম পিঁয়াজু, কাঁকড়া ভাজা—সব মিলিয়ে এক জমজমাট উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল সেখানে। সন্ধ্যার আগে সৈকতে তরুণ-তরুণীদের সেলফি, পাথরে বসে গিটার বাজিয়ে গান গাওয়া দৃশ্য যুক্ত করছিল ঈদের আনন্দে ভিন্নমাত্রা।

পটিয়া থেকে পতেঙ্গায় ঘুরতে আসেন আহসান করিম। তিনি জানান, ‘পটিয়া গ্রামে কোরবানি শেষে আজ (মঙ্গলবার) পরিবার নিয়ে এসেছি ঘুরতে।’কলেজ শিক্ষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি ঈদেই চেষ্টা করি পতেঙ্গা অথবা কক্সবাজারে যাওয়ার। এই সৈকতের টান আমাকে বারবার ডাকে।’

চট্টগ্রামের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই বিনোদন কেন্দ্র ফয়’সলেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক এবং চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাতেও দেখা গেছে বিপুল দর্শনার্থীর সমাগম। ৩৩৬ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত পাহাড়ঘেরা ফয়’সলেক পার্কের কৃত্রিম সমুদ্র, ওয়াটার পার্ক সী-ওয়ার্ল্ড, রাইড ও অন্যান্য আকর্ষণে হাজারো মানুষ মেতে ওঠে আনন্দে। ডিজে মিউজিকের তালে তালে পানিতে নেমে নাচে-গানে এক ভিন্ন রঙে রাঙানো ছিল পার্কজুড়ে পরিবেশ।

ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘এবার ঈদের ছুটি অনেক লম্বা। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রতিদিন পরিবার নিয়ে কোথাও না কোথাও ঘুরব।’ তিনি জানান, সোমবার পতেঙ্গা ঘুরে মঙ্গলবার এসেছেন ফয়’সলেকে।

কনকর্ড পার্কের উপ-ব্যবস্থাপক (বিপণন) বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান, চট্টগ্রাম শহরের বুক চিড়ে জেগে ওঠা ফয়’সলেকের প্রাকৃতিক পরিবেশে আধুনিকতার সম্বনয়ে গড়ে ওঠা অ্যামিউজমেন্ট পার্কে দর্শনার্থীর সমাগম শুরু হয়েছে ঈদের দিন দুপুর ২টা থেকেই। তবে ঈদের দিন মানুষের আনাগোনা কিছুটা কম থাকলেও দ্বিতীয় দিনে কিছুটা ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। সকালে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির কারণে অনেকেই ঘর থেকে বের হয়েছে কিছুটা সময় পেরিয়।

“থোকা থোকা সবুজ পাহাড়ের বুক চিড়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের আঁকাবাঁকা হ্রদে নৌ ভ্রমণ করছে অনেকেই যাদের বিভিন্ন রাইডে চড়ার আগ্রহ কম। বেশীর ভাগ দর্শনার্থী এসেছেন চট্টগ্রামের ওয়াটার পার্ক সী-ওয়ার্ল্ডের কৃত্রিম ঢেউয়ে সামদ্রিক স্বাদ নিতে , এছাড়াও জলকেলী উৎসবে মেতে উঠতে নানা রকম রাইড উপভোগ করতে। প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা বেইসক্যাম্প এ্যাডভেঞ্চার নিতে আসছেন প্রকৃতি ভ্রমন পিপাসুরা। অ্যামিউজমেন্ট পার্কের নতুন ছয়টি রাইড সহ সবখানেই মুখরিত হবে রোদের তাপ একটু কমে বিকেল হলেই ।”

“এবারের ঈদের ছুটি লম্বা হওয়ার কারণে দূর দূরান্ত থেকে চট্টগ্রামে পর্যটন স্পটে এসে ফয়'স লেক রির্সোট বেছে নিয়েছেন। ঈদের তৃতীয় দিন ছিলো উপচে পড়া ভীড়' সকাল থেকেই। সী ওর্য়াল্ডে সকল রাইডে নেচে গেয়ে মেতে উঠেছিলো আগত দর্শনার্থী গণ। সব মিলিয়ে চমৎ কার এক ঈদ অভিজ্ঞতা নিয়ে আনন্দময় স্মৃতি নিয়ে। ঈদের দিন বিকেল থেকে আজ ৪র্থ দিন পর্যন্ত ফয়' সলেক কমপ্লেক্স মোট দর্শনার্থী আনুমানিক সংখ্যা ১২০০০ জনের কিছুটা বেশী হতে পারে, আগামী শুক্রবার পর্যন্ত ঈদ উপলক্ষ্যে বাড়তি দর্শনার্থীর পদচারনা থাকবে বলে আশাবাদী বিশ্বজিৎ ঘোষ।”

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাও ছিল দর্শনার্থীতে মুখর। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ ভিড় করছেন বিরল প্রজাতির সাদা বাঘ, সিংহ, জলহস্তী ও রঙিন পাখিদের দেখতে। চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ জানান, ‘ঈদের দিন টিকিট বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার, পরদিন ১০ হাজার, আর সোমবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩ হাজারে। গতকাল মঙ্গলবার টিকেট বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১১ হাজার। বৃষ্টি না হলে আরও বেশি টিকেট বিক্রি হতো বলে তিনি জানান। ’