কর্মব্যস্ত ঢাকা শহরের আবদ্ধ পাখির জীবন থেকে একটু বিরতি নিয়ে প্রশান্তি ভরে দম নেয়ার তেমন কোনো জায়গা নেই বললেই চলে। এমনকি ইট, কাঠ, কংক্রিটের এই শহরে এক টুকরো সবুজের রাজ্য খুঁজে পাওয়া ভার। এখানে গলা ছেড়ে গাইবার পরিবেশও অপ্রতুল। তাই সাপ্তাহিক অথবা যেকোনো সরকারি ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন গ্রামীণ ইজেলে তৈরি প্রকৃতির কাছাকাছি কোনো জায়গা থেকে।
এমনই এক জায়গা হলো নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ঘেরা ‘বসন্ত বিলাস’। এছাড়া আপনি যদি সকালে গিয়ে সারাদিন প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করে বিকেলে ঢাকায় ফিরে আসার কথা ভাবেন তাহলেও আপনার জন্য ‘বসন্ত বিলাস’ বিনোদন কেন্দ্র হতে পারে সেরা পছন্দ।
‘বসন্ত বিলাস’ বিনোদন কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলার তারাবো উপজেলার মুগড়াকুল গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ৫০ বিঘা জায়গাজুড়ে ‘বসন্ত বিলাস’ বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। ঢাকার থেকে মাত্র ঘণ্টা খানেকের দূরত্ব।

কয়েক প্রহরের জন্য সমস্ত ব্যস্ততার কথা ভুলে নিশ্চিন্তে হারিয়ে যেতে পারেন এক সবুজ রাজ্যে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে পরিবার কিংবা বন্ধু-বান্ধবের সাথে সুন্দর সময় কাটাতে পারবেন মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠা এই বিনোদন কেন্দ্রে। বিনোদনের নানা আয়োজনে ভরপুর এই ‘বসন্ত বিলাস’।
যা যা আছে বসন্ত বিলাসে
এই বিনোদন কেন্দ্রে ঢুকে সোজা সামনের দিকে তাকালেই নজর কাড়বে একটি লেকের ওপর গড়ে ওঠা কাঠের পুলের। যার নিচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ম্রিয়মান স্রোতধারা। এই পুলে দাঁড়ালে এক মুহূর্তের জন্য মনে হতে পারে আপনি ঢাকার হাতিরঝিলে আছেন। পুলের বাম দিকে হেঁটে গেলে চোখে পড়বে একটি ‘খেলা ঘর’। যেখানে প্রায় সব ধরনের ইনডোর গেম উপভোগ করতে পারবেন। খেলা ঘরের পাশের গলিতে থাকা এক সবুজের রাজ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। এই সবুজের রাজ্য মাড়িয়ে সামনে দিয়ে হেঁটে গেলে চোখে মিলবে ‘শিশু চত্বর’। যেখানে শিশুদের খেলাধুলার সমস্ত বন্দোবস্ত সুনিপূণভাবে করা হয়েছে। কাঠের পুল থেকে সোজা সামনের হাঁটতে থাকলে প্রতিটি পরতে পরতে গড়ে ওঠা সৌন্দর্য থেকে চোখ ফেরানো ভার। দু’টি বিশাল দিঘিতে আপনি অনায়াসে করতে পারবেন নৌকা ভ্রমণ। আর যারা মাছ ধরতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ আয়োজন। খেলাধুলার জন্য আছে বড় মাঠ, যেখানে পরিবারের সবাইকে নিয়ে মেতে উঠতে পারবেন ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন ও অন্যান্য খেলার আনন্দে। এমনকি আপনি ‘ডুব সাঁতার’ নামের সুইমিং পুলে দিতে পারবে সাঁতার। থাকার জন্য এখানে আছে উন্নত মানের ‘ইচ্ছেডানা’ কটেজ। এই কটেজগুলো দারুণ সুন্দর ফুলের বাগান দিয়ে ঘেরা। নেপালি কায়দার এই চমৎকার কটেজগুলোতে চাঁদনী রাতে কাটাতে পারবেন দারুণ কিছু মুহূর্ত।

এই বিনোদন কেন্দ্রের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো, প্রবেশ মূল্য ২০০ টাকা মোটেই বৃথা যাবে না। এ প্রবেশ মূল্যের টাকা দিয়ে আপনি স্বাদ নিতে পারবেন দেশী-বিদেশী নানা খাবারের। এছাড়াও এখানে রয়েছে গার্ডেন রেস্টুরেন্ট, স্ন্যাক্স কর্নার, কফি শপ ও পিকনিক কিচেন। পিকনিক আয়োজন করার সব সুযোগ-সুবিধাও পাবেন সেখানে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকার যাত্রাবাড়ী/গুলিস্তান থেকে যেতে হবে তারাবো বিশ্বরোড। সেখান থেকে আধা কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই ‘বসন্ত বিলাস’। অবশ্য, তারাবো বিশ্বরোড নেমে ৫০-৬০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে সহজেই যেতে পারবেন এই বিনোদন কেন্দ্রে।
পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াত
১. গুলিস্থানের ‘আহাদ পুলিশ বক্সের’ পাশ থেকে গ্লোরী, আসিয়ান, রাণীমহল বাসে সরাসরি গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার (হানিফ ফ্লাইওভার) দিয়ে সুলতানা কামাল সেতু পার হয়ে তারাবো বিশ্বরোডে নামতে হবে। বাসের ভাড়া জনপ্রতি ৫০ টাকার কাছাকাছি।
২. গুলিস্থানের জাতীয় স্টেডিয়ামের (বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) সামনে থেকে মেঘলা বা গুলিস্তান-তারাবো পরিবহনে যেতে পারবেন। ভাড়া জনপ্রতি ৬০ টাকা হতে পারে।
টিকিট মূল্য
‘বসন্ত বিলাস’ বিনোদন কেন্দ্রে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২০০ টাকা। সুইমিং পুলে ২ ঘণ্টা সাঁতার কাটার জন্য এন্ট্রি ফি জনপ্রতি ২০০ টাকা এবং নৌকা ভ্রমণ ১৫ মিনিটের জন্য জনপ্রতি ৫০ টাকা।
প্রবেশ সময় : সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
বিশেষ সতর্কীকরণ : জুতা ও লুঙ্গি পরে সুইমিং পুলে প্রবেশ নিষেধ।
লেখক : কবি, অভিনয়শিল্পী ও গণমাধ্যমকর্মী।